. সত্যধর্ম্মের অন্তরায়।
খুব যত্ন সহকারে পড়িতে হইবে।
জ্ঞানের দ্বারা সত্যকে অন্তরস্ত করিয়া জীবনে স্থাপন করিতে পারিলেই মনুষত্বের পরিচয় বহন করে। আর অজ্ঞানতাই সত্যকে আড়াল করে এবং জীবন নরক গামী করে। শিক্ষিত সমাজ সত্যের সন্ধানে সর্ব্বদা নিয়ত সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে কেন কল্পনা ও মিথ্যা পরংপরায় সত্যকে দূরে নিক্ষেপ করিতেছে??
১) সত্যধর্ম্মীরা হিন্দু নহে। কেননা সত্যধর্ম্মে সাকার উপাসনা নাই, যোগ-সাধন নাই, জাতিভেদ নাই এবং নির্ব্বাণ অর্থাৎ ঈশ্বরে লিন হওয়া (আমি পরমপিতা) নাই। এই চারিটি হিন্দু ধর্ম্মে বর্ত্তমান আছে।
২) মা আদরমণি দেবীকে গুরুমা বলিলে পাপ হয়। গুরু, শিষ্য ও দীক্ষা নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে কোনও একজন স্ত্রী আত্মা দীক্ষা কার্য্য করিলে তিনি গুরুমা হন কিন্তু তাহার স্বামী কি গুরুদেব হন ? নিশ্চয়ই না সুতরাং আদরমণি দেবী আমাদের মা এবং তাঁকে মাতা ঠাকুরানীও বলিতে পারি। গুরুদেব চিঠিতে ইহার উল্লেখ করেছেন কি ডাকতে হবে।
৩) উপাসনা কালে সাকার ছবি রাখিয়া উপাসনা করিলে সত্যধর্ম্মের প্রথম সর্ত লঙ্ঘনের পাপ হয়। সুতরাং উপাসনায় কোনরূপ ছবি মূর্তি রাখা যাইবে না। কারণ নিরাকারের অস্তিত্ব কিছুই লক্ষিত হয় না। সাধারণ কোনও একজন ঐ অবস্থায় উপাসনা দেখিলে প্রথমেই বুঝিবেন ঐ মহাত্মাদের উপাসনা করিতেছেন এইরূপ ভাবিবার জন্য ঐ স্থানে যতজন থাকিবে সকলার পাপ হইবে ইহা স্থূলের সূক্ষ্ম পাপ।
গুরুদেব স্বশরীরে যখন ছিলেন তখন কি তিনি বসিতেন তাহার দিকে সকলে মুখ করিয়া বসিয়া উপাসনা বা উৎসব করিতেন? নিশ্চয়ই না তাহলে ঐ নির্বোধের কার্য্য কেন হইল? গুরুদেব একবার তীর্থ ভ্রমণ করিতে যাওয়ার আগে সকলকে বলিয়াছিলেন আমি কয়েকটা উৎসবে থাকতে পারব না তোমরা ঠিক করে উৎসব করিবা। তখন কি ভাবে করিয়াছিলেন? গুরু পূজা সূক্ষ্ম প্রধাণ গুরুদেব লিখছিলেন। সূক্ষ্মভাবে গুরু পূজায় গুরুদেবের ছবি মূর্তি অবয়েব কিছুই চিন্তা করা যায় না সুতরাং পরমপিতার উপাসনা নিরাকার সেই নিরাকার উপাসনা করতে বসে গুরুদেবের ছবি ও অন্যান্য ছবি রেখে ঘোর পাপের পতিত হইতেছে।
৪) প্রেম গুণের উপাসনায় কাম্যবিষয়ক শব্দ ব্যাবহার করা যাইবে না। প্রেম কামনাতিত সুতরাং এক আসনে অর্থাৎ প্রেম গুণের উপাসনার সময় কাম্য বিষয়ের শব্দ ব্যাবহার করা যাইবে না। যেমন করুণাময়, কৃপাময়, দয়াময়, পাপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
৫) উপাসনা প্রণালীতে স্বীয় পাপের উল্লেখ আছে সেখানে মৌখিক প্রার্থনা না করিয়া নিয়মের বহির্ভূত কাজ হইয়াছে ও হইতেছে।
৬) "সত্য সনাতন পতিতিত পাবন নিত্য নিরঞ্জন বিভূ জয় জয়" এই গানটী পাপ হইতে মুক্তির নিমিত্ত সুতরাং এই গানে নৃত্য করা যায় না। নিজের পাপের কথা জানাইয়া নৃত্য করা ত দূরে থাকুক দাঁড়ানো পর্য্যন্ত যায় না। ব্যাকুলতা ও অশ্রুসজলেই মানায়।
৭) সাধারণের জন্য উপাসনা খণ্ডে উপাসনা পদ্ধতি লিখিয়া গিয়াছেন তাহা যথাযথ পালন হইতেছে না। আর অসাধারণ কাহারা সত্যধর্ম্মের প্রথম পরিচ্ছেদে লিপিবদ্ধ আছে, ১৩টি গুণ যেমন প্রেম, সরলতা, পবিত্রতা, একাগ্রতা, ভক্তি ও ঈশ্বরজ্ঞান আছে, যাহার মন কুপথে গমন করে না, সম্পত্তি বিষয় নিস্পৃহতা, নিষ্পাপ অবস্থা বা মূর্ত্তিমতী পবিত্রতা, অন্যদীও পাপগ্রহণ ক্ষমতা, লোকের উপকার ভিন্ন অপকার করিব না, এই বিষয় দৃঢ়-নিশ্চয়তা, সিদ্ধিসমূহ লাভের উপযুক্ত গুণ, কাম-ক্রোধহীনতা এবং অন্ততঃ সমস্ত মনুষ্যকে সহোদরবৎ দর্শন ও তদনরূপ আচরণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে তিনবার ইত্যাদি ব্যাবহার হইয়াছে অতএব আরও অনেক গুণের প্রয়োজন।
৮) "সর্ব্বসিদ্ধি শান্তিদাতা জগৎগুরু গুরুনাথের জয় জয় জয়। শান্তিদাতা সুখদাতা দুঃখহারী গুরুনাথের জয় জয় জয়" এই গানটী পরমপিতার গুণকীর্ত্তন সুতরাং এই গানটী গুরুপূজায় গাওয়া যায় না। তাহা হইলে গুরুদেকে পরমপিতার আসনে বসাইবার ঘোর পাপে পতিত হইতে হয়। সর্ব্বসিদ্ধি প্রদান করেন একমাত্র পরম পিতা পরমেশ্বর। গুরু সিদ্ধি উৎপাদন কারী না পরমপিতাই সৃষ্টি কর্ত্তা। গুরু সিদ্ধি পাইতে সাহায্যকারী মাত্র। জগৎগুরু একমাত্র পরম পিতা পরমেশ্বর ( গুরুতত্বে লিপিবদ্ধ আছে "গুরুর প্রতি পরমা ভক্তি করিবে। নতুবা জগৎগুরু জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তি করা সুকঠিন হইবে।) এখানেই প্রমাণ গুরুদেব কখনই জগৎগুরু হইতে পারেন না। গুরুদেব ঈশাষ্টকম্ এ লিখিয়াছেন "গুরুনাথ নাথ তুমি গুরু হে আমার" প্রথমেই মনে রাখিতে হইবে যে এই স্তবটি পরম পিতার গুণকীর্ত্তন, আর গুণকীর্ত্তনে গুরুদেব নিজের নাম ব্যাবহার করবেন? তাহা হইলে বহু গানে বা স্তবে ব্যাবহার করিতেন। একজনের নাম দীননাথ তাহা হইলে তিনি কি দীননাথ শব্দ দিয়া কোনও গান রচনা করিতে পারিবেন না? তিনবার জয়ধ্বনী আছে, স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণের কথা আছে।
৯) গুরু বরণ গুরু ভক্তির নামন্তর সুতরাং গুরুবরণ কেন হয় নাই ? সত্যধর্ম্মের গুরুতত্ত্বে উল্লেখ আছে গুরুকে বরণের বিষয় আর সাধনা গ্রন্থে আছে কিভাবে গুরুকে প্রদক্ষিণ করিয়া প্রণাম করিতে হয় ইহাতে ভক্তি গুণ বারে।
১০) কল্পনা মাত্রই মিথ্যা, মিথ্যা মাত্রই পাপ স্পর্শ হয় জানিবে। ইহা শুনিয়াও কেন উহা অবলম্বন করিতেছে। "উপপতিরতা প্রায় উপধর্ম্ম পাপময় ধর্ম্মবোধে অধর্ম্মেতে সাধু নাহি রত হয়।" নিজ স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্যের স্বামীর সঙ্গে সহবাস করিলে যে পাপ হয় সেইরূপ পাপ হয় কল্পনার মূর্ত্তিকে অবলম্বন করিলে। " কিন্তু গুরুর অভাবে ধর্ম্মাকাঙ্ক্ষার প্রভাবে অধর্ম্মেরে ধর্ম্ম ভেবে অনেকে যায় নিরয়" অর্থাৎ নরকে যেতে হয়। উপাসনা গ্রন্থে আছে কল্পিত দেব দেবী অপসারণ পূর্ব্বক অর্থাৎ ফেলে দিতে বলিলেন। আমাদের কি করা প্রয়োজন?? গুরু বাক্য শোনা নাকি মিথ্যা পরংপরায় থাকা??
১১) কেন কল্পিত ছবি রাখিয়া উৎসব পর্যন্ত হইতেছে? গুরুদেবের বাসভূমি নদী গর্ভে সমায়িত হয়। নদী গতিপথ বহু বৎসর ধরিয়া দূরে সরিতে থাকে এবং চড়া পড়িয়া বিরাট সমতল ভূমিতে পরিণত হয় উহা দেশের নিয়ম অনুরূপ সরকারি ভূমিতে পরিণত হয়। উহারই কিছু ভূমির অংশ বিশেষ নির্ধারিত করিলেন যে গুরুনাথের ঐ অংশে বাসভিটা ছিল সুতরাং কিছু তথাকথিত সত্যধর্ম্মের ব্যাক্তি বিশেষ করিয়া প্রধান ভূমিকায় ছিলেন দিলীপ বিশ্বাস, নিখিল হীরা, হৃষিকেশ সরকার ও হরেন্দ্র নাথ সরকার আরও অনেকে যাহারা ঠিক করেন ঐ জমি আমাদের আমরা অধিগ্রহণ করিব। তাহারপর সোচ্চার ও তদারকি শুরু হইল। অধিগ্রহণ করিতে বাঁধা সৃষ্টি হইল সরকারি নিয়ম। নিয়ম মোতাবেক এক উকিলের পরামর্শ নেওয়া হয় তাহাকে সকলে বলিল এই ভূমি আমাদের গুরুদেবের ভিটেমাটি ইহা সুনিয়া ঐ উকিল সরকারি নিয়ম অনুরূপ বলিলেন আপনাদের গুরুদেবকে সরকার চেনেন না অতএব এইভাবে সরকার জমি অধিগ্রহণ করিতে সম্মতি দিবেন না। উকিল পরামর্শ দেন যে হিন্দু ধর্ম্মের ন্যায় মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া পূজা অর্চনা করিতে থাকেন এবং আস্তে আস্তে অধিগ্রহণ করিতে পারিবেন ইহা আইনে আছে। ইহা সুনিয়া ঐরূপ সহজ ভাবে মিথ্যার পথেই চলিতে উদ্যত হইল প্রধান উদ্যোক্তেরা। কল্পনা মানে মিথ্যা সেই মিথ্যাকেই অবলম্বন করিয়া অধিগ্রহণ ও উৎসব হইতেছে। "প্রানান্তেও মিথ্যা বলিবে না" গুরুদেব বলিয়াছেন কিন্তু গুরু বাক্য পালন হইল কি? এটা কি ধরনের গুরু ভক্তি হইল ?? লজ্জা থাকা উচিৎ এদের, এরা আবার নিজেদের সত্যধর্ম্মাবলম্বী বলে।
১২) নাম প্রদান দীক্ষা নহে কেন উহাকে দীক্ষা বলা হইতেছে?
. দীক্ষা একটী পরমজন্ম, এই জন্মের পিতা গুরু, মাতা বাহ্যজগতের অভিজ্ঞতা (বিশিষ্ট জ্ঞান), শ্রদ্ধা তাহাদিগের প্রকৃতপ্রেম, শুক্র প্রণবযুক্ত বীজ, শোণিত বিশ্বের মনোহর ভাব এবং জন্মভূমি পরমেশ্বরের পরম প্রেমময় অঙ্ক-দেশ। দীক্ষারূপ জন্ম যাহার হয় নাই, তাহার পক্ষে নরজন্ম বিফল।
দী়ক্ষা বৈজিক ভাষায় হয়। দীক্ষা গুণ অনুসারে পৃথক পৃথক ভাবে হয়। সকলার এক বীজ হয় না। পাপ গ্রহণ এবং অভেদজ্ঞান করিয়া বীজ প্রদান করেন। দীক্ষা নিয়ম পূর্রক কৃত হইলে এক মাসের মধ্যে দেবদর্শন সম্ভব। সুতরাং সত্যধর্ম্মের নিয়ম অনুসারে দীক্ষা না পাইয়া সত্যধর্ম্মাবলম্বী বলিতে পারেন না।
"নাম" প্রাপ্তগণ কখনই দীক্ষিত নহে সুতরাং সত্যধর্ম্মাবলম্বী হইতে পারেন না। "নাম" বীজ নহে পরম পিতার কোনও একটি গুণবাচক শব্দ মাত্র। বীজ সর্ব্ব সম্মূখে প্রকাশ্য নহে। দু একটি শব্দ উপমা স্বরূপ গ্রন্থে দেওয়া আছে মাত্র। মহাত্মা নিবারণ মাতাজী উপযুক্ত সাধক না পাইয়া ছয়জনকে সাধারণ "নাম" প্রদানের অনুমতি দিয়াছিলেন। তিনি এও বলেন উহা দীক্ষা নহে। ১৯৬৩ সালে বড়মগরা উৎসবে প্রশ্ন উত্তরে লিখিত দিয়াছিলেন। অতএব আত্মন্নতির জন্য সঠিক ভাবে দীক্ষিত হওয়া আবশ্যক।
পরমাত্মা হইতে অনন্ত রূপে পৃথক পৃথক ভাবে আত্মা বিচ্চুত হয় বীজ দ্বারা। সর্ব্বপ্রথম বীজ সৃষ্টি হয় তাহা হইতেই বৃক্ষে রূপান্তরিত হয় ঠিক তেমনই যে বীজ হইতে যে আত্মা সৃষ্টি হইয়াছে সেই বীজেই তাহার মুক্তি সুতরাং সেই বীজ পরমপিতা হইতে একমাত্র সৎ গুরুই সংগ্রহ করিয়া শিষ্যকে প্রদান করিয়া থাকেন। অতএব ঐ বীজ না পাইলে মানব জন্মের স্বার্থকতা সম্পদন হইবে কি করিয়া???
বীজতগ ভাষা বলিয়া বৈজিক শব্দ হইয়াছে। যেমন বাংলা ভাষায় চারলাইন লিখা হইল। উহাকে সংক্ষিপ্ত অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষায় একটী লাইনে করা হইল, এই সংস্কৃত লাইনটী যখন একটী শব্দে পরিনত হবে তাহাকেই বীজ ভাষা বা বৈজিক ভাষা বলা হইয়া থাকে। কোনও একটী গাছ তাহার পাতার আকৃতি ও শিরা উপশিরা এবং রং বিভিন্ন প্রকার সংঘটিত হয় উহা সকলি বীজে সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান। ঐ গাছের ফলের গঠোন, রং আকৃতি বিভিন্ন হইও সকলি ঐ বীজের ভেতর গুপ্ত ভাবে থাকে। ঐ গাছের আয়ু, গঠোন ডালের বৈশিষ্ট্য, ঐ ফলের শত শত বৃক্ষের জন্ম সকলই সমাহিত রহে বীজে সুতরাং বীজ সুপ্ত এবং গুপ্ত উহাকে কৃপণের মত হইয়া সযত্নে রক্ষা করিয়া রাখিতে হয়। ঐ বীজ হইতে বৃক্ষে পরিণত করিতে হইলে জল, বাতাস, শুদ্ধ মাটি, খাদ দিয়া যত্ন করিলে অর্থাৎ সাধক কঠোর সাধনা ও উপাসনা দ্বারা উন্নতি করিতে পারিলেই সিদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং মুক্তি লাভ করেন। যে সাধক যত যত্ন করিতে পারিবে ততই সে ভাল ফলে ভূষিত অর্থাৎ সিদ্ধি প্রাপ্ত হইবেন।
সুতরাং প্রকৃত গুরু হইতে বৈজিক বীজ প্রাপ্ত হইলে নিজেকে অর্থাৎ আত্মাকে চিনিতে পারা যায় এবং পরম আত্মার দর্শন লাভে কৃতার্থ হইয়া মানব জন্মের সার্থকতা সম্পাদন সম্ভব হয়। প্রতিটি আত্মার জন্ম জন্ম ধরিয়া নিজ নিজ পাপ ও পুণ্য সঞ্চিত থাকে ও তাহার সমাধানও ঐ বীজে বর্ত্তমান সুতরাং ঐ বীজ প্রাপ্ত না হইলে জীবন নরক গামী হয়।
১৩) দীক্ষিত না হইলে সত্যধর্ম্মী হইতে পারে না তবুও সকলে বলিতেছে সত্যধর্ম্মী ইহা ঠিক নহে। সত্যধর্ম্মের তৃতীয় পরিচ্ছেদে আছে "পূর্ব্বোক্ত উপাসনাপ্রণালী অবগত হইলেই ( উপাসনা প্রণালীর মধ্যেই ওঁং সত্যং পূর্ণমমৃতং ওঁং আছে) যে, সম্পূর্ণরূপে সত্যধর্ম্মাবলম্বী হইল এমত নহে। সত্যধর্ম্মাবলম্বী হইতে হইলে এই ধর্ম্মে দীক্ষিত হওয়া আবশ্যক।
১৪) সত্যধর্ম্মে স্থূল দেহধারী নারীগণ দীক্ষা দিতে পারেন না। তাহাও হইয়াছে। গুরুতত্ত্বে বর্ণিত আছে "স্ত্রিয়া দত্তঃ পুনঃ সংস্কার মহতি।" সুতরাং কোনও স্ত্রিলোক হইতে মন্ত্র প্রাপ্ত হইলে উহা সংস্কার করাইতে হয়।
১৫) যাহারা সমদর্শনে সিদ্ধ হইতে পারেনাই তাহারা আবার ঐ সাধনা করাইতেছে। সমদর্শনে সিদ্ধ হইলে ক্ষুধা হীন, তৃষ্ণা হীন ও নিদ্রা হীন অবস্থায় বহুদিন উপাসনায় রত হইতে পারিবেন। ইহা গুরুগীতায় বর্ণিত আছে।
১৬) যাহারা নিজে দীক্ষিত নহে তাহারা আবার নাম প্রদান করিতেছেন। নাম প্রাপ্ত দীক্ষিত নহে। বৈজিক ভাষায় দীক্ষিত না হইলে সত্যধর্ম্মী হইতে পারে না। সুতরাং ঐরূপ কার্য্য করিতেছে কি ভাবে।
১৭) সত্যধর্ম্মের নামে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধ করিতেছে। আধিপত্য, নাম এর জন্যেই এইরূপ করিতেছে কিন্তু সত্যের কাছে তারা অপারক।
১৮) উৎসব ক্ষেত্র শিক্ষা কেন্দ্র কেন উৎসবে এতদিন পঞ্চসময় উপাসনা হয় নাই? উপাসনার পক্ষে ব্রাহ্মমূহুর্ত্তে ও নিশীথ (অর্দ্ধরাত্র) অতি প্রশস্ত সময়। তদ্ভিন্ন প্রাতঃ, মধ্যাহ্ন ও সায়াহ্ন ও উৎকৃষ্টকাল। অতএব ঐ পঞ্চ সময় উপাসনা করিবে। সব শিক্ষা উৎসবেই দিতে হইবে যাহাতে সৎ সতীগণ বাড়িতে অনায়াসেই করিতে পারে।
১৯) কেন এতদিন ত্রিসন্ধা গুরুপূজা উৎসবে হয় নাই? গুরুদেব তত্ত্বজ্ঞান সঙ্গীতে ইহার উল্লেখ করিয়াছেন ইহাতে মোহ দূর হয়।
২০) গুরুদেব কল্পিত দেবদেবীর ছবি ও মূর্তিতে প্রণাম পর্য্যন্ত করিতে বারণ করিয়াছেন তাহা এখনও কেন হয়? গুরু পূজা ভিন্ন কাহারও পূজা করিবে না গুরুদেব বলিয়াছেন কেন মিথ্যাকে অবলম্বন করিয়া নরক গামী হইতেছে?
২১) সত্যধর্ম্মীদের ঘরে কেন কল্পিত ছবি ও মূর্ত্তি থাকে? কল্পনা মানে মিথ্যা মিথ্যা মাত্রই পাপ স্পর্শ হয় জানিবে গুরুদেবের বানী।
২২) গুরু আজ্ঞা কেন অক্ষরে অক্ষরে পালন হইতেছে না? গুরুদেব পরলোকগমন হইবার পর এইরূপ অরাজকতা শুরু হইয়াছে। কমিটি গঠন করিয়া মহাত্মা নিবারণকে বাদ দিয়া উৎসব পর্য্যন্ত হইয়াছে। গুরুদেব নিজে হাতে দিয়া গিয়াছিলেন মহাত্মা নিবারণকে কিন্তু তাকে নানা অপবাদ শুনিতে হইয়া ছিল। ইহারি জন্য এইরূপ অনিয়ম হইতে থাকে।
২৩) এক আসনে গুরুদেবের সঙ্গে প্রণব কেন থাকে? থাকিলে প্রণবের স্থূল পূজা হইয়া যায় ইহা কেন?? প্রণব নিরাকার শব্দ সুতরাং নিরাকার ওঁং এর অর্থ অনন্ত অনন্ত অনন্ত গুণময় পরমেশ্বর অতএব গুরুদেবের আসনে প্রণব রাখা যায় না।
২৪) সত্যধর্ম্মের প্রতিটি গৃহ মন্দিরে পরিনত হওয়া উচিৎ ছিল, কেন হয়নি? গুরুদেব বলিয়াছেন যেখানে পরমপিতার গুণকীর্ত্তন হয় সেই স্থান তির্থভূমীতে পরিনত হয় কিন্তু কৈ? সকলে উপাসনায় বিভর কেন হইতেছে না? গুরুগীতায় আছে, গুরুগুণকীর্ত্তন যেখানে অর্থাৎ গুরুগীতা পাঠ হয় সেই স্থান বারানসী, গয়া পবিত্র ভূমিতে পরিণত হয়। প্রতিটি সংসারে পবিত্রতা বজায় থাকিল কৈ? স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি হইলে প্রেমভঙ্গ হয়। ইহা প্রেম প্রবন্ধে আছে। তাহা প্রত্যক্ষ হইতেছে না কেন?
২৫) কেন গুরুদের ছবির সঙ্গে অন্যান্য ছবির মেলা মেলাইয়াছে? ইহাতে একসময় গুরুদেবের ছবি খুঁজিয়া বাহির করিতে কষ্ট হইবে ইহা কেন? গুরু ভিন্ন কাহারও পূজা করিবে না ইহা কি পালন হইতেছে? ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।।
মহাত্মা নিবারণ ক্ষমা গুণের অবতার পরে তিনি প্রেম গুণেরও অবতার হইয়াছিলেন তাহার পরেও জীবনের শেষের দিকে বলিয়াছিলেন আমি সত্যধর্ম্মী হইতে পারিনাই কারণ এই সব তিনি করিতে চাইয়াছিলেন কিন্তু তখনকার কেহই তাঁহাকে তেমন কিছু করিতে দেন নাই। তিনি আক্ষেপ করিয়া এও বলিয়াছেন "আমার খেতে ভাল ফসল হয় নাই।" দিনের পর দিন বহু ভাবে লাঞ্ছিত হইতে হইয়া ছিল উহা আত্মস্মৃতি গ্রন্থে দেখিয়া লইবেন।
ইহাই নাকি গুরুভক্তি?? যাহারা নিজেদের মনে করেন গুরু ভক্তি পরায়ন তাহাদের একবার ভাবিতে বলিতেছি। এভাবে গুরুভক্তি সঙ্কটে কতদিন কাটাইবেন??? গুরুদেবের ব্যাথার কারণ কেন হইবেন??? আশাকরি একবার নিশ্চই ভাবিবেন।
এইভাবে চলিলে গুরুদেবের এত পরিশ্রম সব বৃথা হইবে। এখনও সময় আছে ঠিক করিবার। দির্ঘ আট বছর ধরিয়া তর্ক করিয়া বিফল হইয়াছে কেননা এখানে গুরু বাণী ও সত্যধর্ম্ম গ্রন্থের বাক্য তুলিয়া তুলিয়া তর্ক খণ্ডন করা হইয়াছে, ইহার পরেও এখনও সেইরূপ কার্য্য দেখিতে হইতেছে। ইহাতে কি সত্যের প্রচার হইবে?????
যাহাদের একটু চেতনাশক্তি আছে তাহারা একটু বিবেচনা করিয়া দেখুন সত্যধর্ম্মের নিয়ম ও গুরুবাক্য পালন করিবেন, নাকি মিথ্যা পরম্পরা আঁকড়ে জীবন নষ্ট করিবেন???
0 মন্তব্যসমূহ