মহাত্মা মাত্রই বৈজীক ভাষায় জ্ঞানী নহেন।


 'সাধনা'এই মধুময় শব্দটি কর্ণকুহরে প্রবেশ করা মাত্রই হৃদয়ে একটি অভুতপূর্ব আনন্দ উপলব্ধি হয়। জন্মমাত্রে আমরা প্রত্যেকে সাধক কারন আমরা কিছু না কিছু চাই।সাধনা জেনে করলে তা মধুর হয়, সঠিক পথে পরিচালিত হয়। পর্বতশৃঙ্গে বরফের ওপর সূর্যালোকের বিচ্ছুরণ এর প্রভাবে যে অতুলনীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় বা অন্যান্য যে কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য যতজন কবির লেখনীতে বর্ণিত হোক না কেন তা অর্ধপ্রকাশিত থাকে।সাধনার ফলে যে সিদ্ধি অর্জিত হয় তা সম্পূর্ণ ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

সাধনা সাধারণত দুপ্রকার-অন্বয়ী এবং ব্যাতিরেকী।সাধনা অর্থাৎ অভ্যাস করা,কোন ব্যাক্তি যদি মাদকাসক্ত হয় সেই অভ্যাসকে অনুকূল পরিস্থিতি দ্বারা ধীরে ধীরে বিরত থাকা অভ্যাস করাকে অন্বয়ী সাধনা বলা হয়। অপরদিকে কোন বিষয়কে হঠাৎ অত্যন্ত পরিমাণে বৃদ্ধি করে তার চরম অপকারিতা উপলব্ধি করে একেবারে ছেড়ে দেওয়াকে বলা হয় ব্যাতিরেকী সাধনা। পৃথিবীতে অন্বয়ী সাধনার সংখ্যাই অধিক এবং এই সাধনা শ্রেষ্ঠ সাধনা।
সাধক সাধিকার উন্নতির সোপান ভক্তি। ভক্তি কোমল এবং মিশ্র গুণ।ভয়ে ভয়ে ভালোবাসাকে ভক্তি বলা হয়।সাধনা কালে মাতাপিতা আমাদের ভক্তিভাজন, তাদের ভক্তি না করতে পারলে গুরু ভক্তি সম্ভব না।ভক্তি হীনতাবশত অভক্তির পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত কোন ব্যাক্তি যদি গুরুদেব বা উন্নত কোন মহাত্মার প্রতি ভক্তি করতে সচেষ্ট হয় তাহলে তা সহজে লব্ধ হতে পারে কারন মহাত্মাদিগের অন্তরে যে সমুজ্জ্বল গুণপ্রভা শোভিত থাকে তার প্রতি মন সহজে আকৃষ্ট হয় এভাবে ভক্তি সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যায়।
সরলতা সাধনা কারী প্রথমে তার পরিবার এবং  প্রথমে নিজেকে এবং সবশেষে নিখিল ব্রহ্মান্ডকে প্লাবিত বিলকন করে অনন্ত জ্ঞানময়ের জ্ঞানাগ্নী প্রভায় অনন্তভাব প্রাপ্ত হওয়া মানে সাধনার ফল প্রাপ্ত হওয়া।
কাম যেমন আত্মায় বহুক্লেশদায়ী তেমনি কামের বিপরীতে প্রেমের অভ্যাস অসম্ভব কে সম্ভব করে।ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না কিন্তু তার অপরদিকে তেজে দৃঢ়তা সহকারে উদ্দেশ্য কার্য্য সাধিত হয়।
কোন ব্যাক্তি যদি মহাত্মাদের দ্বারা আশির্বাদ লাভের ফলে সন্তান প্রাপ্ত হন এবং ওই মহাত্মার চরনে অঙ্গীকারবদ্ধ হন যে সেই সন্তানকে উপাসক তৈরি করবেন, জগতের মঙ্গল সেবায় নিয়োজিত করবেন, সত্য পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবেন এবং মতিভ্রম বশত যদি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন তাহলে দৈবদূর্বিপাকে দৈবযোগে প্রাপ্ত সন্তানের পাপবশত ইহলোক ত্যাগ করার সম্ভাবনা থাকে, মৃত্যু না ঘটলেও নৈতিক বোধবিমুখ হতে পারে।
যেসকল ব্যাক্তি যোগসাধনা করে শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে চেষ্টা করেন তারা গুণের বিশ্লেষণ সঠিকভাবে না জানার কারনে তারা যে প্রকান্তরে গুণের সাধনা করছেন এই সত্য থেকে বঞ্চিত হন।যোগ সাধনা থেকে গুণ সাধনা বহু অংশে উন্নত।
আমাদের মনে গতি আলোক গতির থেকেও দ্রুত,মানব মন এতটাই কার্যপ্রবণ যে মূহুর্তের মধ্যে তা পরিবর্তনশীল।এই বিষয়কে সঠিকভাবে পরিচালনা দ্বারা অষ্টপাশ ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সাধনার মূল উদ্দেশ্য। পৃথিবীতে যতপ্রকার অন্যায়কার্য ঘটে তা এই পাশের তাড়নায় হতে থাকে।সাধনা অর্থাৎ অভ্যাস ভিন্ন তা কমানোর কোন উপায় নেই। সত্য ধর্ম্মে এর সুচারু ব্যাবস্থা বর্তমান।তাই সাধক তৈরির কৌশল একমাত্র সত্যধর্ম্মে প্রকাশিত হয়েছে। ঈশ্বর গুরুনাথ ভিন্ন এই মুক্তির পথ দেখানোর ক্ষমতা জগতে আর কারোর হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ