ভক্তি গুণের কথা। Talking about devotion.


 আমরা এই সৃষ্টি মন্ডলে এসছি এখানে সীমা আছে। প্রেমের সীমাবদ্ধ ভাব ভক্তি।তিঁনি প্রেমময় তিঁনি অসীম।প্রেমময় রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র একটি কণা মাত্র এই সৃষ্টিমন্ডল। এখানে সীমা আছে। যেখানে সীমা সেখানে ভক্তি।অসীম প্রেম,তাই আমাদের মনে রাখতে হবে গুণ অর্জনের জন্য আমরা পৃথিবীতে এসছি আর ভক্তি না হলে কিন্তু গুণ অর্জন সম্ভব না। আমাদের মধ্যে একক গুণের অভাব তবে মিশ্র গুণ রয়েছে। সহজ জ্ঞান, নির্ভরতা, বিশ্বাস, কৃতজ্ঞতা এই গুণগুলি ভক্তি গুণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।


 এখন, নির্ভরতা কেমন করতে হয় ? যিনি আমার থেকে অতি উন্নত; যার থেকে আমি উপকার পেয়েছি; তার প্রতি কৃতজ্ঞতা সহকারে মন আকৃষ্ট হয়; অভ্যাসকৃত সাধনা লব্ধ যে কার্য্য আগে পারতাম না ধীরে ধীরে যার সহায়তায় আমি পারব তার প্রতি নির্ভরতার অঙ্কুর তৈরি হয়।এরফলে পিতা-মাতা,শিক্ষক,গুরুজনদের প্রতি ভক্তির সূচনা হয়। প্রথম নির্ভরতা হয় মায়ের প্রতি। একটি শিশু তার মায়ের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে সেই সাথে আত্মীয় স্বজন অনেকেই রয়েছে।তাদের মধ্যে কোন একজন শিশুটিকে বলছে,আয় আয় আমার সঙ্গে আয়। কিন্তু শিশুটি তার মা কে ছেড়ে কিছুতেই গেল না।ওই শিশুটির ধারনা রয়েছে মা আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে সেটাই সঠিক। আরও যারা ছিল সবাই একসঙ্গেই যাচ্ছে কিন্তুসন্তানের কেবল মায়ের প্রতি নির্ভরতা রয়েছে।


শিক্ষক যখন প্রথম প্রথম আসেন,প্রথমে কানে শোনা হয় যে ইনি,এই বিষয়ে আমাকে শিক্ষা দিতে পারবেন। প্রথমেই কিন্তু নির্ভরতা হয় না।সহজ জ্ঞানে তার কাছে যখন দিনের পর দিন অধ্যায়ন করতে থাকা হয়;তার শেখানো বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জন হয় তখন তার প্রতি বিশ্বাস এবং নির্ভরতা তৈরি হয়;যেটা আমি পারিনা সে বিষয়ে তার কাছে জেনে পড়াশোনা করতে করতে তার প্রতি তখন নির্ভরতা বাড়তে থাকে।প্রথমেই এটা সম্ভব না।এটা স্বাভাবিক।প্রথম শুনতে হয়,তার আদেশ অনুসারে কার্য্য করতে হয়। বিশ্বাস গুণ নিয়ে গুরুদেব লিখেছেন, বিশ্বাস হল মিশ্র গুণ।এই বিশ্বাস গুণের পূর্ববর্তী গুণগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হয়।এই নিয়মের বাইরে সম্ভব না।যদি কানে শোনা হয় তিনি এই গুণে গুণান্বিত তাহলে কাছে থেকে পরীক্ষা করতে হবে,দূর থেকে বিশ্বাস হবে না।


নির্ভরতা গুণটি কেমন ? গুণের বিচারে উন্নত মহাত্মার প্রতি নিজ ভার অর্পণ করাকে নির্ভরতা বলা হয়।যে গুণ আমার নেই,তার আছে সেই গুণ অর্জনের স্বার্থে নিজের ভুল করার যে প্রবণতা সেই স্বার্থ তাকে নিয়ে দেওয়াকে নির্ভরতা বলা হয়।


অনেকেই বলে, তোমার তো বাকসিদ্ধি আছে তুমি মুখে বললেই হয়ে যায়। তাদের এটা বলা স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু আমি যদি আমার স্বাধীনতা গুরুর চরণে দিয়ে দিই,তিনি না জানালে আমি দিতে পারবো না।আমার তার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হয়,তিনি যদি জানান আমি দিতে পারি।পরমপিতাকে যখন পাওয়া যায় তখন অসম্ভব কিছু না তবে সেই গুণে পারদর্শী হতে হয়। গুরুদেব একটি চিঠিতে লিখেছেন," আমি তার আজ্ঞাবহ দাস,তার আজ্ঞা বিনা কি পার্থিব,কি আধ্যাত্মিক কিছুই দিতে পারিনা"। পরমপিতার প্রতি তার নির্ভরতা। গুরুদেবের তো বাকসিদ্ধি ছিল,তিনি বললেই হয়ে যায় তাও তিনি একথা বললেন কেন ? কেননা তিনি এখানে নির্ভর।

ভক্তিতে মুক্তি তবে অন্ধভক্তিতে নরকগামী হতে হয়।কাকে আমি ভক্তি করবো তাকে যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। সত্য ধর্ম্মে গুরু যে কেউ হতে পারেন না কারন গুরু হতে গেলে তাকে বহু গুণের প্রমান দিতেই হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ