কুম্ভ এবং মহাকুম্ভ মেলার বিশেষত্ব। The main fact of Kumbha Mela.


 মহাকুম্ভ মেলার বিশেষত্ব:


মহাত্মা ভোলানাথ এই মহাকুম্ভ মেলার মূলটা শুরু করেছিলেন সেই মূলটা জানাচ্ছি; 'কুম্ভ' কথার অর্থ 'কলস' বা 'হাঁড়ি' এবং পুরাণে আছে কুম্ভ কথার যে কাল্পনিক অর্থ তা হল 'গর্ভ'।এই 'গর্ভ' শব্দটি পরে কল্পিত রূপে ব্যবহার হয়েছে। কেন 'গর্ভ' বলা হয়েছে এবং এর পৌরাণিক যে গল্পকথা আছে তা এইরূপ যে; সমুদ্র মন্থন হয়েছিল সেই মন্থনে সুর এবং অসুর মিলিতভাবে যোগদান করে, সমুদ্র মন্থনের ফলে যে হলাহল অর্থাৎ বিষ নির্গত হয় তা মহাত্মা ভোলানাথ পান করেন তাই তাকে নীলকন্ঠ বলা হয়েছে। এই যে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী এর তাৎপর্য কি তাই নিয়ে আমি জানাচ্ছি; সত্যধর্ম্ম পারলৌকিক ধর্ম্ম। আত্মাকর্ষণ উপায় দ্বারা এই ধর্ম্ম প্রাপ্ত হয়েছে সুতরাং প্রকৃত সত্য জানানো সত্যধর্ম্মের মূল উদ্দেশ্য। মহাত্মা ভোলানাথ অর্থাৎ শিব প্রথম বৈজীক ভাষায় দীক্ষা দেওয়া শুরু করেন। তিনি আদি বৈজীক ভাষায় দীক্ষা প্রদান করেন। পৃথিবীতে যে যে প্রচলিত ভাষা আছে তার উৎপত্তি বা মূল স্রোত এই বৈজীক ভাষা। প্রণব ধ্বনি থেকে শব্দের সৃষ্টি তা থেকে বৈজীক ভাষার উৎপত্তি। 

সেই বৈজীক ভাষায় তিনি দীক্ষা দেন।***দীক্ষা একটি পরম জন্ম।এই জন্মে পিতা-গুরু,মাতা-বাহ্য জগতের অভিজ্ঞতা,শুক্র-প্রণব যুক্ত বীজ, শোণিত-বিশ্বের মনোহর ভাব,পরম প্রেমময় অঙ্কদেশ, শ্রদ্ধা- তাদের প্রকৃত প্রেম,গর্ভ-এই জন্মভূমি।

দীক্ষা রূপ পুণ্য লাভের কথা বলা হয়েছে, আমাদের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লোভ,মদ,মাৎসর্য্য,কুল,শীল,জাতি, ঘৃণা, লজ্জা ভয় ইত্যাদি অষ্টপাশ এবং রিপুকুলের পাশবিক তাড়নায় জন্ম জন্ম ধরে যে অন্যায় কাজে লিপ্ত হই তা আমাদের আত্মায় সঞ্চিত হতে থাকে,সেই পাপ থেকে সাময়িকভাবে মুক্ত করার জন্য তিনি বৈজীক ভাষায় পাপ গ্রহণ এবং অভেদজ্ঞান পূর্ব্বক দীক্ষা দিয়েছিলেন।এই স্থান পুণ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে এটাই এর প্রকৃতার্থ।

মহাত্মা ভোলানাথ সুর এবং অসুর অর্থাৎ ভালো এবং খারাপ যত আত্মাই এসেছিলেন তাদের জন্ম জন্ম ধরে সঞ্চিত যত পাপ আছে তা মন্থন করে জানেন। তাদের মধ্যে যাদের আত্মা কিছুটা উন্নত তাদের দেবতা বলা হচ্ছে এবং যারা নিম্নস্তরের তাদের অসুর বলা হচ্ছে। উভয়ের পাপের বোঝা যখন জানতে পারল, সেই পাপ টাই হচ্ছে বিষ।সেই বিষ অর্থাৎ পাপ তিনি গ্রহণ করেন তাই তাকে নীলকন্ঠ বলা হয়। বিষ পান করে অমৃত দান করেন অর্থাৎ পাপ গ্রহণ করে ওই মহামূল্যবান বীজমন্ত্র দান করেন। এই স্থানে শয়ে শয়ে, হাজার হাজার মানুষকে তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন।

পাপ থেকে মুক্তির জন্য সবাই এখানে গিয়েছিলেন মহাত্মা ভোলানাথের কাছে। প্রাচীনকাল থেকে দীক্ষা প্রদানের স্থান পূণ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।এই কুম্ভ মেলা হল দীক্ষারূপ মিলনের আয়োজন।যা বর্তমানে পার্থিব স্নানে পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ সেখানে পূণ্য প্রাপ্তির আশায় যাচ্ছে কিন্তু মূল বিষয় তাদের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে !

মাতৃগর্ভ থেকে আমরা জন্মগ্রহণ করি।তাই কুম্ভ থেকে দীক্ষারূপ পরম জন্মের কথা বলা হয়েছে।

যে সময় বা তিথি অনুসারে ১২ বছর পর পর এই কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, তখন গ্রহ নক্ষত্রের যে অবস্থান থাকে সেই স্থূলের সূক্ষ্ম দিক বুঝে তিনি দীক্ষা প্রদান করেছিলেন। 

সবাইকে গভীরভাবে বুঝতে হবে মূল সূত্রটা কি। সত্যি সবাই তারা মুক্তি পাওয়ার জন্য লালায়িত।সবাই মুক্তি পাওয়ার জন্য পার্থিব বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে।


সত্যধর্ম্মের যিনি আবিষ্কারক,গুরু মহাত্মা গুরুনাথ তার গুরু মহাত্মা ভোলানাথ যে উপায়ে দীক্ষা প্রদান করেছিলেন ঠিক সেভাবেই সত্যধর্ম্মে দীক্ষা লাভ হয়।* মুক্তি যদি কেউ পেতে চায়, যে সূত্র বললাম সেই উপায়ে দীক্ষা পাওয়ার পর সবাই মিলিয়ে নেবে; সেই মহাত্মা অর্থাৎ মহাত্মা ভোলানাথ এর কাছ থেকেই জেনে নেবে এই যে কুম্ভ মেলা তার প্রকৃত অর্থ কি ! মহাত্মা ভোলানাথের কাছ থেকেই জেনে নেবে।সুবর্ণ সুযোগ এবং এইজন্মেই সম্ভব এভাবে জানা।সকলকে আহ্বান করি সবাই যাতে এই মহান উৎসব রূপ দীক্ষা লাভ করে নিজের আত্মার উন্নতি সাধন করতে পারে, পরমপিতার দর্শন পেতে পারে।এটাই হচ্ছে এই কুম্ভ মেলা রূপ উৎসবের মূল।


                                                      ---আদিষ্ট নিরুপম।


সনাতন কথার অর্থ চিরন্তন, নিত্যকাল ছিল আছে এবং থাকবে এই বৈশিষ্ট্য একমাত্র সত্যস্বরূপ বিষয়ে বিদ্যমান। সত্য অপরিবর্তনীয়, অবিনশ্বর। তাই সত্যতা জেনে বুঝে কার্য করলে তা ফলপ্রসূ হয়। ১২ বছর পরপর কুম্ভ মেলা এবং ১৪৪ বছর পরপর প্রয়াগ রাজে অনুষ্ঠিত মহা কুম্ভ মেলায় কোটি কোটি মানুষ পুণ্য লাভের আশায় সমাগত হয়েছে।এই কুম্ভ এবং মহাকুম্ভ মেলার প্রকৃতার্থ, প্রাচীন ইতিহাস সকলের জানা প্রয়োজন। তবেই মহাত্মা ভোলানাথ এর পুণ্য বিতরণের উদ্দেশ্য সফল হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ