নিরাকারের উপাসনা আছে, অর্চনা নাই। সাকারের অর্চনা আছে, উপাসনা নাই।
গুণ নিরাকার পঞ্চ ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও তক দ্বারা বুঝতে পারি না। গুণের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ঘনত্ব ও ব্যাসার্ধ কিছুই নাই। গুণকে আমরা অনুভূতি দ্বারা অনুভব করতে পারি। গুণের শক্তি, ব্যাপ্তি ও অন্তর্নিহিত প্রকাশ অনুভব করি বা বুঝতে পারি অতএব গুণকে অনুভূতি দ্বারা নিজেকে (আত্মায়) আভরণ করতে পারি। যেমন করুণা গুণকে আমরা পঞ্চভূতের মাধ্যমে দেখতে পাই না কিন্তু করুণা গুণের শক্তি আমার ভেতর হয় তার জন্য আমাকে করুণা গুণের চর্চা করতে হবে বারবার। এবং ঐ করুণা গুণ আমার মধ্যে যাতে হয়। আমি যাতে করুণা করতে সমর্থ হই। তেমনি অন্যান্য গুণের উপাসনা অর্থাৎ বারংবার চর্চা করা। তেমনি দোষ গুণও নিরাকার কিন্তু দোষের চর্চার প্রয়োজন হয় না একবার শুনলেই তা চিরদিন মনে থাকে ও তার প্রভাবে অনায়াসে দুষিত হই।
গুণ নিরাকার, গুণের উপাসনাকালে কোনও সাকার বস্তু রাখা মানে সাকারে আসক্তের উদ্দেশ্য সুতরাং এটা মিথ্যাচার। মনকে নিরাকার গুণের অধিকারী করা একমাত্র কাজ। মন যদি সাকারে আসক্ত হয় তাহলে নিরাকার গুণের কথা চিন্তা করা যায় না। মন ঐ সাকারের দিকেই চলে যায় এতে উপাসনা কিছুই হয় না। মনকে ঐ গুণের কার্য্যে একমাত্র নিয়োজিত করতে হয়। এক বিন্দু সাকার কোনো রূপ চিন্তা মনমন্দিরে আনা যায় না। অতএব উপাসনা কালে ছবি মুর্ত্তি রাখার উদ্দেশ্য নিরাকার বিমুখতা। যখন বলা হয়েছে সাকারের উপাসনা হয় না কেননা সাকার বস্তু পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা দেখতে পাই তখন সাকার কিছু রাখা যায় না নিরাকারের উপাসনায়। উপাসনা কালে সাকার বস্তু রাখা মানে ঐ বস্তুর প্রতি আসক্তি সুতরাং উপাসনা বিন্দুমাত্র হয় না।
গুরু পূজা যদি সূক্ষ্ম ভাবেই প্রধান হয় তাহলে উপাসনা কালে গুরুকে সূক্ষ্ম ভাবেই ডাকতে হয়, কেননা সূক্ষ্ম গুরু পূজায় গুরুদেবের অবয়ব অর্থাৎ আকৃতি চিন্তা পর্য্যন্ত করা যায় না কেবল গুরুর গুণের কথা চিন্তা করতে হয়। তাহলে উপাসনা কালে নিরাকার তত্ত্বের উদ্দেশ্য সত্য অবলম্বনে হতে হবে।
উন্নতি অতি সহজ, তা একমাত্র সত্য অবলম্বনেই হবে। সেখানে উদ্দেশ্য কার্য্য মিথ্যার ভিতের উপর সম্ভব না।
যারা এইরূপ শোনার পরেও ঐরূপ কার্য্যে প্রবৃত্ত হচ্ছে তারা সাকারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তাই নানারূপ ভুজুম ভাজুম অবান্তর মিথ্যা যুক্তি উপস্থাপন করে নিজেদের বড় গৌরবান্বিত করে। আসলে অজ্ঞানতার সংখ্যা অধিক। কল্পনাকে যারা ধর্ম্ম বলে মানে সাকারের প্রতি আসক্ত তারা ঐ মোহজাল থেকে বেরতে পারেনা বলেই ঐরূপ উপাসনা উৎসবে সাকার গুরুদেবের ছবি ও মিথ্যা কল্পিত ছবি মূর্তি রেখে উপাসনা করে। আর যাদের মধ্যে কল্পিত মিথ্যা ছবি মূর্তির দেবদেবীর প্রতি প্রবল আসক্তে পরিপূর্ণ তাদের যতই বলা হোক না কেন তারা কখনই গুরুদেবকে উন্নত ভাবতে পারে না তার জন্যই ঐ মিথ্যা ছবি মূর্তি গুরুদেবের ছবির পাশে রাখে এতেই প্রমাণিত যে গুরুদেবের থেকে ঐ কল্পিত ছবি মূর্তির গুণ অধিক এবং অনেক বড়। গুরুকে সর্বপরি রাখতে হয় তা এদের বোধের বাইরে। এরা ভাবতেই পারে না যে মহাত্মা গুরুনাথ সত্যধর্ম্ম আবিষ্কার করেছেন ও এই সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ, যদি ভাবত তাহলে ঐসব ছবি মুর্তি রাখত না। গুরু ভিন্ন কাহারো পূজা করিবে না এই উপদেশ অমান্য একমাত্র বড় প্রমাণ।
কল্পনার জগতে ধর্ম্ম বলে মানে বলেই গুণকে এরা বুঝতে পারে না ও ঐরূপ গুণসম্পন্ন হতে পারে তা কিছুতেই ভাবতে পারে না। কেননা এটা ভালোই জানে যে ওটা মিথ্যা ছবি মুর্তি তাও মিথ্যায় আকৃষ্ট তাই তাদের ভাবনা গুণী হওয়াটাও মিথ্যা। গুরুদেব যে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন তা এদের বোধের বাইরে তাই ত এরা গুরুকে বিশ্বাস করে না গুরুদেবের উপদেশ মানে না।
একদম কেউ বুঝতে পারছে না তা না যারা সত্য ভালো বাসে ও একটু বুদ্ধি বিবেচনা রাখে একমাত্র তারাই এই সব সহজ সত্য বুঝতে পারছে ও তারা গ্রহণ করছে তাদেরকে কিঞ্চিৎ মানুষ বলতে ইচ্ছে করে কেননা তাদের ভেতরে সত্যে চলা ও ইচ্ছা দুই আছে মনে হয়। সত্যস্বরূপ পরমপিতার সন্তান হয়ে যারা সত্যকে অস্বীকার করে এহেন নিকৃষ্ট পশু হতেও খারাপ তা পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যারা সত্যকে মানতে পারে না যারা সত্যনিষ্ঠ সত্য পরায়ণ পরমপিতার একমাত্র উৎকৃষ্ট পথ প্রদর্শক শ্রেষ্ঠ সন্তানের কথা শোনে না তাদের কি বলে সম্মোধন করব??? যারা সেই মহান গুরুদেবকে বিশ্বাস করে না তাদের কি বলে সম্মোধন করব??? পরমপিতার একমাত্র উৎকৃষ্ট পথের নিয়ম মানে না তাদের কি বলে সম্মোধন করব???
------- আদিষ্ট নিরুপম।
0 মন্তব্যসমূহ