সত্য ধর্ম্মে গুরু যদি বলেন," আশ্রম গ্রহন করো" তাহলে বুঝে নিতে হবে তিনি হৃদয়ে জগদীশ্বরকে স্হান দিতে বলছেন।জগদীশ্বর অর্থাৎ এই জগতের সৃষ্টি কর্তা তিঁনি অনন্ত, অসীম, নিরাকার গুণের সমষ্টি।তিঁনি নারী নন, পুরুষ নন,সজীব নন,নির্জিব নন,তিঁনি সগুণ আবার নির্গুণ। পরমেশ্বর এক এবং অদ্বিতীয় আমাদের মতো তিঁনি জন্মগ্রহণ করেন না অতএব তাঁর মৃত্যু নেই।এই সীমার মধ্যে তিঁনি অসীম ভাবে বিরাজমান।এই প্রকৃতির গুণকে অন্তরস্থ করে নিজের ভেতরের গুণাবলীকে অভ্যাসের দ্বারা উপলব্ধি করাকেই আশ্রম গ্রহন করা বলা হয়। ইঁট, কাঠ, পাথর দিয়ে ইমারত নির্মাণ করলে তা প্রকৃত আশ্রম নয়।হৃদয় মন্দিরে যদি অনবরত পরমেশ্বরের গুণকীর্তন করা যায়,সেই উৎসব মুখরিত অবস্থার অধিকারী সাধক প্রকৃত আশ্রমী। সৃষ্টিকর্তা যে আমাদের অন্তরে আছেন এবং বাইরেও আছেন এই উপলব্ধি করতে পারাই মানব জন্মের সার্থকতা।
সত্য ধর্ম্মের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বাড়ি মন্দির হওয়ার কথা সেই মন্দিরে সকলের হৃদয়ে পরমেশ্বর আসীন থাকা মানেই তা আশ্রমে পরিণত হবে। জন্মসূত্রে আমরা কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মাৎসর্য্য ইত্যাদি পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করি।এই সত্যকে উপলব্ধি করে পাশবদ্ধ পশু থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা অর্থাৎ মনুষ্যত্ব। অষ্টপাশ ষড়রিপু থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সাধনা, উপাসনা করা দেবত্ব পর্যায়। দেবত্ব থেকে পরমেশ্বর এঁর অনন্ত গুণের কোন একটি গুণের পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত অর্থাৎ ব্রহ্ম দর্শন করাকে ঈশ্বরত্ব বলা হয়।
এই মুক্তি পথের পথপ্রদর্শক গুরু যিঁনি নিত্যভাবে পরমপিতাকে জেনেছেন, প্রেমময়ী অবস্থা লাভ করেছেন।প্রেমিক বলেই তাঁর শিল্পী প্রতিভায়, নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া ভালোবাসায় আমাদের মঙ্গল কার্যে সদা নিয়োজিত।
আমরা প্রেমের বন্যায় ভেসে আছি, আমাদের ভেতরে এবং বাইরে প্রেম আছে অজ্ঞানতা বশত উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হই। পাপের কারণে প্রেম রসে সিক্ত হতে পারিনা।আমাদের আত্মার অবস্থা প্রায় কচু পাতার মত হয়। আমাদের শরীরও প্রেমের শৃঙ্খলে আবদ্ধ, পঞ্চভূতের সমন্বয়ে গঠিত।
সত্যধর্ম্মের সংবিধান অনুযায়ী গুরু গৃহ এবং উপাসনালয় পৃথক হবে। গুরুদেব এবং পরমপিতা এক নন। আমাদের প্রবর্ত্তক গুরু একজন শিল্পী তিঁনি গুরুদেবের মূর্তি তৈরি করেছেন।গুরুদেবের নিজের লেখা সমস্ত গান দিয়ে গুরু পূজা আমাদের উপহার দিয়েছেন। সত্যধর্ম্মের নিয়মের বাইরে এতদিনে যত মিথ্যাচার হয়েছে তার উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে সংশোধন করেছেন।গুরু হওয়ার উপযুক্ত গুণাবলী অর্থাৎ বহু সিদ্ধি দেখিয়ে তিঁনি আদিষ্টের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। আমাদের আত্মোন্নতি ছাড়া যিঁনি আমাদের কাছে কিছুই চায় না।সেই অশেষ গুণভূষিত মহাত্মার কথা যদি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি তবেই আশ্রমী হতে পারব।
0 মন্তব্যসমূহ