মূল কথা অজ্ঞানতার কারণে বিশ্বাস করতে পারে না উন্নতির মূল্যতা সুতরাং হিংসাই তাদের মূল ধন। নিজে উন্নতি করতে পারেনি বলে উন্নত ব্যক্তির সমালোচনা ও কুমন্ত্রণা উপস্থাপন করে।
প্রতিদিনে নরে মরে তবু নাহিক চেতনা,
মরনের ভয় দূর কি কারনে করিছ না ?
ফাঁকি দিকে শমনেরে !
সে তো না নাছোড় সদা ওরে।
তারে ফাঁকি সেই দেয়,যে করে সদা সাধনা।
যেমন যাঁতার মাঝে যেকোনো শষ্য বিরাজে,
ঘূর্ণিত চূর্ণীত সব কীলক ধারক বিনা।
অতএব শুন বলি,অসারে দাও জলাঞ্জলি।
সারাৎসারে ভজ সদা, নাহিক রবে ভাবনা।।
---ঈশ্বর গুরুনাথ।
গুণ অর্জনের জন্য আমাদের এই পৃথিবীতে আসা অথচ জন্ম জন্ম ধরে প্রকৃত সত্য পথের সন্ধান না পাওয়ার কারণে নিজেদের অজ্ঞানতা বশত, পাশের তাড়নায় ভোগাসক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে আমরা আত্মাকে গুণ রুপ অমৃতের জোগান দিতে ব্যর্থ হই। একমাত্র গুণ সাধনার মধ্য দিয়েই আমাদের মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়, সত্যকে ধারন করাই মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে তার আগে আমি যে পাশবদ্ধ পশু এই জ্ঞান হতে হয়।
আমাদের চারপাশে প্রতিটি বিষয়ের বিপরীত দিক রয়েছে; আলো-অন্ধকার, সত্য-মিথ্যা, ঊষা-গোধূলী, দিন-রাত্রি, চাঁদ-সূর্য, ভালো-মন্দ, কম-বেশি, অনু-পরমানু, আকর্ষণ-বিকর্ষণ, সৃষ্টি-বিনাশ, ইত্যাদি ইত্যাদি।এই বৈপরীত্যের কার্য-কারণ সম্বন্ধকে নিয়ে পরমপিতা এই সৃষ্টি মন্ডল রচনা করেছেন। আমাদের মধ্যে জাতগুণ হিসেবে কাম,ক্রোধ, লোভ, মদ, মাৎসর্য্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন।এই প্রতিটি দোষের আবার বিপরীত গুণ রয়েছে যেমন কামের বিপরীত প্রেম, ক্রোধের বিপরীতে তেজ প্রভৃতি। সত্যধর্ম্ম এই সমগ্র জগৎবাসীর মুক্তির পথ। মুক্তি বলতে পার্থিব সমস্ত দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়া নয়।এই সংসার জীবনে থেকে পরমপিতা যে অনন্ত গুণের সমষ্টি;জ্ঞান,প্রেম, ভক্তি, সত্য,দয়া, সরলতা, একাগ্রতা,পবিত্রতা,বিশ্বাস, কৃতজ্ঞতা, শান্তি,নিরাময়, ক্রমোন্নতি, গুণকীর্তন ইত্যাদি প্রতিটি গুণ যে নিরাকার ঈশ্বর এবং অনন্ত অনন্ত অনন্ত গুণের সমষ্টি পরমেশ্বর, সৃষ্টি-স্থিতি-লয় কর্ত্তা সর্বশক্তিমান জগদীশ্বর।সেই পরব্রহ্ম,যাঁর কোন একটি গুণের পরাকাষ্ঠা লাভে,বিশাল মহাসমুদ্রের একবিন্দু জলে এই অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানব মুক্তি পেতে পারে। সত্যধর্ম্মে যিঁনি আদিষ্ট হয়ে যে বীজে আমরা পরমপিতা থেকে সৃষ্টি হই,যে বীজের মধ্যে আমাদের বৈশিষ্ট্য,কর্মফল সঞ্চিত থাকে, সবার বীজ পৃথক হয় তাই আমরা ব্যক্তিভেদে আলাদা। গুরু হওয়ার উপযুক্ত গুণাবলী সম্পন্ন মহাত্মা পারেন নিজগুণে আমাদের পাপ গ্রহণ করে গুণের অভ্যাস দ্বারা আমাদের আত্মার উন্নতি সাধিত করতে। ঈশ্বর গুরুনাথ আবিষ্কৃত সত্যধর্ম্মেই এই উপায় আছে। সত্যতায় পরিপূর্ণ তাই শ্রেষ্ঠ। আদিষ্ট হতে গেলে বহুগুণে সিদ্ধি অর্জন করে তার প্রমাণ স্বরূপ এই সুমহান কাজের দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুধু মুখে বলেই গুরুভার পালন করা যায় না।
পৃথিবী পঞ্চভূত দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে, অনুরূপ ভাবে আমাদের দেহ সেই পঞ্চভূতের ভৌত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি। আমাদের জীবাত্মার চাওয়া পাওয়া থাকে,তার প্রয়োজন মত আকর্ষণ থাকে।দোষ আমাদের মধ্যে অনায়াসেই প্রবেশ করে কিন্তু নিজের ভেতরে থাকা দোষকে নিয়ন্ত্রণ করে গুণকে আত্মায় প্রবেশ করানো কঠিন তবে অসম্ভব নয়।এটা করতে পারা এবং না পারার ওপর নির্ভর করে আমাদের বেঁচে থাকা, আমাদের মনুষ্যত্ব বোধ, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য। পুরোপুরি যে নির্বিঘ্নে হয়ে যায় তা নয় তবে গুরুর চরণ লাভ করা এবং গুরুকৃপাময় জীবন যদি হয় একজন পঙ্গু ব্যাক্তি ও পর্বত আরোহণ করতে পারে। তিঁনি গুণ সাধনার কৌশল জানেন তাই এই অল্প আয়ু নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও এক জীবনে পরমপিতাকে পাওয়া সম্ভব। পাওয়া বলতে আমরা প্রেমের শৃঙ্খলে আবদ্ধ কিন্তু প্রেমিক নই। বরং প্রচন্ড ভাবে স্বার্থপর, একাগ্রতা বিহীন,রূঢ়,নির্মম ইত্যাদিতে আসক্ত। যাদের আমারা কাছের বলে মনে করি তারা কি আমাদের আত্মোন্নতি চায় ? গুরু ভিন্ন এ জগতে এই মঙ্গল কেউই চায়না।যদি চাইতো তাহলে নিজেরা সেই কার্যে ব্রতী হত।এখন অনেকের নাম শুনতে পাওয়া যায় তারা পরমপিতাকে পাওয়ার জন্য যে সত্যতায় পরিপূর্ণ পথ তা লাভ করেনি, জীবদ্দশায় মিথ্যাচার করে গেছে,যাতে নরকগামী হতে হয়। মিথ্যা মানেই নরক। সমস্ত দেবদেবী গুরুদেবের গুণের কাছে নত কারন তিঁনি সত্যধর্ম্ম আবিষ্কার করেছেন।এই পথ অন্য কেউ দেখায়নি, দেখানোর সাধ্যও নেই।তাই গুরুকে বাদ দিয়ে অন্য কারোর পূজার আবশ্যকতা নেই।তারা সহায়ক, ভক্তিভাজন এটুকু।আর এখন তো দেবদেবীর কল্পিত মিথ্যা মূর্তি স্থাপন করে পূজা করে মিথ্যাচার করছে চারপাশে।যে মূর্তিগুলোর সাথে সেই দেব বা দেবীর চেহারার কোন মিল নেই। মিথ্যার ওপর আস্থা রাখলেই সেটা সত্য হয়ে যাবে না। এগুলো একপ্রকার ফাঁকিবাজি।তারা যে গুণে উন্নত সেই গুণের অভ্যাস করতে পরিশ্রম হবে তো।তার জন্য আবার সবকিছুকে ফেলে দিয়ে সত্যকে অবলম্বন করতে হবে।আর উপাসনা, সাধনা তা তো একমাত্র সত্যধর্ম্মে আছে। কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠতা তো অন্যান্য দিকে।যতই যা হোক সত্য অবিনশ্বর, অপরিবর্তনীয়, অনন্তকাল ছিল আছে এবং থাকবে।এই সত্য যে যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে তার জন্য মঙ্গল।এই পথ সবার জন্য উন্মুক্ত,সবার সমান অধিকার। পরমপিতা কারোর একার হতে পারে না তাই আদিষ্ট কারোর একার নন। ততপ্রকার গুণে তিঁনি সুশোভিত হয়েই এই আদেশ পান। বাকিটা সবার ব্যক্তিস্বাধীনতা।
0 মন্তব্যসমূহ