সত্যধর্ম্ম পারলৌকিক প্রধান ধর্ম্ম, ইহলোকের ন্যায় কোনো রূপ নিয়ম এই ধর্ম্মে নেই। সত্যধর্ম্ম একত্ত্ব প্রাপ্তির উৎস ভূমি অর্থাৎ পরমপিতাকে দর্শন করার একমাত্র সহজ পথ। একদা, এই পথ প্রাপ্ত হতো কোটি কোটি বৎসরের মধ্যে মাত্র দুই একজন। আমাদের উদ্ধারের নিমিত্ত সেই অমূল্য সম্পদকে আমাদের মত নিকৃষ্ট, পাপিষ্ঠ, পাশবদ্ধ পশুদের উদ্ধারের জন্য পরমপিতা তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন সত্য-রত্ন ধর্ম্ম সহকারে।
গুরুদেব নিজে সেই রত্নকে সযত্নে কঠোর সাধনায় সজ্জিত করেছেন নিজেকে ও তা লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন। আমরা ঐরূপ কঠোর সাধনা করতে অক্ষম বুঝে তিনি তা সহজ করে আমাদের দিয়ে গেছেন। যেখানে আগে একটি একত্ত্ব লাভ করতে কোটি কোটি বৎসর অতিবাহিত হয়ে যেত, তাও প্রায় অসম্ভব ছিল। তিনি সেই কোটি কোটি বৎসরের সাধনা একই জন্মে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সম্ভবপর করে দিয়েছেন, এর জন্য স্নেহময়ী মা আদরমণির অবদান অপরিসীম। তিনি যে শ্রেষ্ঠ তার প্রমাণ রেখে গেছেন, মাত্র "চার" বছরের মধ্যে "চার" সাধককে একত্ত্ব লাভ করিয়ে দিয়ে। মহাত্মা নিবারণ, মহাত্মা সীতানাথ, মহাত্মা বলরাম ও মহাত্মা বৈকুণ্ঠ। ধন্য গুরুদেব ধন্য তোমার মহিমা।
এই মহান রত্নকে কলুষিত করার চেষ্টা করা বৃথা কেননা আজ না হলেও কাল ধরা সে পড়বেই। যেমন এখন এক এক করে প্রমাণ সহ তুলে ধরা হচ্ছে।
মহাত্মা গুরুনাথ চিঠিতে লিখছেন "আমি যাকে গুরু ভার দিয়ে যাব, তা বঙ্গ দেশে নাই" কেননা গুরু হওয়ার উপযুক্ত গুণাবলী তখন কারও ছিল না, যদিও তখন কিন্তু চারজনই একত্ব প্রাপ্ত হয়ে গেছেন, তবুও তিনি এই কথা বলার কারণ তো আছে। গুরু হওয়ার উপযুক্ত গুণাবলী মিলিয়ে নেবেন সবাই, হয়তো কিছু বুঝতে পারবেন, কেন এই আক্ষেপ করলেন গুরুদেব? যাই হোক, পরম পিতার কাছে আকুল প্রার্থনা করেন গুরুভার দিয়ে যাওয়ার নিমিত্তে কাউকে মনোনয়নের জন্য, সেই আকুল প্রার্থনার কারনে পরমপিতা নিম্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচারের নিমিত্তে মহাত্মা নিবারণের উদ্দেশ্যে সম্মতি দেন, তাই গুরুদেব বাধ্য হয়ে মহাত্মা নিবারণকে গুরুভার দিয়ে যান। এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে যেটা ভিষন প্রাসঙ্গিক, মহাত্মা সুরেন্দ্রনাথ, গুরুদেবের কাছে আবদার করে বসে তাকে গুরু ভার দিয়ে যাবার জন্য এবং পরমেশ্বরের অনুমতির জন্য গুরুদেবকে একটি বন্ধ ঘরে রেখে প্রার্থনা করতে বলে, গুরুদেব কিছুক্ষণ সেই ঘরে ধ্যাননিমগ্ন হয়, পরে দরজা খুলে বেরিয়ে বলেন, আমি কোন সাড়া পায়নি। একটি কথা বলে রাখি, মহাত্মা সুরেন্দ্রনাথ একত্ত্ব লাভ না করেও অত বড় দায়িত্ব নিতে গুরুদেবের কাছে প্রার্থনা করেছিল। গুরুদেবের কথা শুনে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে সে সেখান থেকে চলে যায় আর আসেনি।
গুরুদেবের শেষ যাত্রায় খবর দেওয়া সত্ত্বেও আসেনি। পরবর্তীতে মহাত্মা নিবারণ সকলকে একত্রিত করবার জন্য ঐ মহাত্মা সুরেন্দ্রনাথকেও ডেকে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করেন। মহাত্মা সুরেন্দ্রনাথ মহাত্মা নিবারণ মাতাজীকে একটুও পছন্দ করত না, কারণ তিনি নিম্ন সম্প্রদায় ভুক্ত ছিলেন, আর সে ত উচ্চ বংশীও তাই,তার ভিতরে সেই অহংকার কাজ করত, উপরন্তু সে মহা পন্ডিত ছিল পার্থিব অপরা বিদ্যার দিক দিয়ে।
পরবর্তীতে, যখন সমস্ত দায়িত্ব ভার মহাত্মা নিবারনের কাঁধে এসে পড়ে, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি ওই মহাত্মা সুরেন্দ্রনাথ। বহু অপবাদ দিয়েছে মহাত্মা নিবারণের উদ্দেশ্যে। মহাত্মা নিবারণ কে বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করে উৎসবাদি পরিচালনা করা শুরু করে। বহু কিছু প্রচলন করে যা সত্যধর্ম্ম নিয়ম বহির্ভূত কারন সে বুঝত, এসব নিয়ম যদি এরা অর্থাৎ তথা কথিত হিন্দু সম্প্রদায় থেকে আগত নিম্ন শ্রেণীর ধর্ম্মার্থীরা পালন করে তাহলে উন্নতি অবধারিত, তাই এই নিম্ন সম্প্রদায় যাতে উন্নতি না করতে পারে তার সুব্যবস্থা সে পাকাপোক্ত করে গিয়েছিল, সেই কারনেই আজকে সত্যধর্ম্মের এই পরিণতি। উপাসনা প্রণালী থেকে সত্যধর্ম্মের শ্রেষ্ঠতা সূচক সংগীত, নির্ব্বেদ জনক সংগীত, স্বীয় পাপের উল্লেখ তার জন্য আত্মগ্লানী ভোগ, ধ্যান, কৃপাময় স্তব ও আনন্দময় স্তব বাদ দিয়ে উন্নতির পথ বন্ধ করার ব্যাবস্থা সুচারুরূপে করে দিয়ে গিয়েছিল। আর আমাদের মত সরল বা বোকা ধর্ম্মার্থীরা সেটাকেই সঠিক মনে করে অনুসরণ করে আজ পাপের পথে ধাবমান। এত গেল একটা পাপের কথা, সে নিরাকারকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে, ফলস্বরূপ গুরুদেবের ছবি সম্মুখে রেখে নিরাকারের উপাসনায় সাকার রূপ প্রদান করে গেছে। সত্যধর্ম্মের সর্ব্বনাশের শুরু সে ই করে গেছে। মহাত্মা নিবারণ যে দীক্ষা দিতেন তা অতি সামান্য তা সঠিক নয়, সেগুলো সবার ভেতরে প্রচার করত যা তে তাঁর প্রতি গুরুভক্তি না জন্মায় তদুপরি মহাত্মা নিবারণকে চোর উপাধি দিয়ে অপদস্থ করার ব্যাবস্থা করে। মহাত্মা সুরেন্দ্র নাথ চতুরতা ও ছলনার মাধ্যমে এইসব কর্ম্মকাণ্ড করে গেছে যা ধরার মত যোগ্যতা হয়ত তৎকালীন ধর্ম্মার্থীদের মধ্যে কারো ছিলনা।
তাই মহাত্মা নিবারণকে সেভাবে সবাই যা তে ভক্তি করতে না পারে, তার শুভ সূচনা করে দিয়ে গেছিল। এই বিষ রূপ উপাসনা প্রনালী বা অসত্য তথ্য সবার ভেতরে সে এমন ভাবে প্রচার করেছিল, যে পরবর্ত্তীতে মহাত্মা নিবারণের কাছে কেউ উন্নতি করতে পারেনি, কারণ সত্যধর্ম্মের মূল সত্যটাই নষ্ট করে দিয়েছিলন। "সাকার উপাসনা নাই" এটাই সত্যধর্ম্মের মূল। বিভাজন এখান থেকেই শুরু হয়। তবুও সব কষ্ট সহ্য করে মহাত্মা নিবারণ একত্রিত করে রেখেছিলেন, কিন্তু লাভ তো কিছু হয়নি। কেননা ঐ বিষের কারণে তাঁর খেতে ভালো ফসল হয়নি, তাই কেঁদে কেঁদে দিন কেটেছে,এই ব্যথা নিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। এই বিষের কারণে একত্ব লাভ করিয়ে দিতে পারেননি কাউকে, কেননা একত্ব লাভ না হলে কাউকে গুরু ভার দেওয়া যায় না।
মহাত্মা নিবারণের কাছে কেউ সমদর্শন সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে যেতে পারেনি, কেন একটু প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছি। মহাত্মা গুরুনাথের কাছে যারা সমদর্শনে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন তাঁদেরকে জানিয়েছিলেন তাঁরা কি কি সিদ্ধি লাভ করেছিল এবং তাদের পারলৌকিক নাম প্রদান করেছিলেন, কেননা সাধক দেবত্ব লাভ করলে তাঁর পারলৌকিক নাম প্রদান করা হয়, চিঠিতে (গুরুলিপী)দেখে নেবেন। মহাত্মা নিবারণ কাউকে এই উপাধিতে ভূষিত করতে পারেননি, এরকম কোনো তথ্য উনি লিখে যাননি, এটাই তার প্রমাণ। তাইতো বলতে বাধ্য হয়েছেন "আমার খেতে ভালো ফসল হয়নি"। আর তিনি কাউকে মহাত্মা বলে উল্লেখ করে যাননি যেটা গুরুদেব তাঁর উন্নত সন্তান দের ক্ষেত্রে করে গেছেন। তাঁর নিজের হাতের লেখা "গুরু স্মৃতি ও আত্ম স্মৃতির" কোন জায়গায় এরকম কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। আমি মুখের কথা মানবো না, আমার এই তথ্যের বিরুদ্ধে কিছু বলতে হলে আমি লিখিত প্রমাণ চাই। মহাত্মা নিবারণ কাউকে না পেয়ে শেষে ছয়জনকে "নাম" দেবার জন্য আদেশ করে যান এবং বলেন এটা কিন্তু "দীক্ষা" না। এটার প্রমাণ মহাত্মা গুরুনাথ "নিত্যকর্ম্মে" দিয়ে গেছেন। তিনি সুপষ্টভাবে বলে দিয়ে গেছেন ওটা সাধারণ "নাম"।
সাধক পুলিনবিহারী বিশ্বাস চলে যাওয়ার পর ভাঙ্গন বৃহৎ আকারে শুরু হয়। ভন্ডামীর আখড়া তৈরি হয়। তার প্রমাণ এক এক করে দিচ্ছি।
১) একটা গান রচনা করেছে সাধক দিলিপ বিশ্বাস মহাশয়। সে না কি আত্মাকর্ষণ উপায় দ্বারা পেয়েছে যা আবার গানের খাতায় লিখিত আছে। এই ভন্ডামি ধরে দেওয়া হচ্ছে সবাই দেখে নিন প্রমাণ সহ। "সর্ব্বসিদ্ধি শান্তিদাতা জগৎগুরু গুরুনাথের জয় জয় জয়। শান্তিদাতা সুখদাতা দুঃখহারি গুরুনাথের জয় জয় জয়।।" অর্থ জেনে নিন: সর্ব্বসিদ্ধি প্রদান করেন পরমপিতা পরমেশ্বর, গুরুদেব তো সাহায্যকারী মাত্র, গুরুদেব সৃষ্টিকর্তা নন। পরমপিতা পরমেশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন তাই তিনি জগৎ গুরু। গুরুদেব "গুরুতত্ত্বে" লিখেছেন "গুরুকে পরমা ভক্তি করিবে। নতুবা জগৎগুরু জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তি করা সুকঠিন হইবে।" গুরুদেব একটি গানে লিখছেন "গুরু বলে গুরু ধ'রে, জগৎ গুরুর কাছে চল," প্রথম গুরু "গুরুদেব", দ্বিতীয় গুরু "মন্ত্র বাচক বীজ", তাকে ধরে জগৎ গুরুর কাছে যাওয়ার কথা বলছেন। তাহলে গুরুনাথ কি করে জগৎগুরু হয়? এই গানে যে গুরুনাথের কথা বলা হয়েছে তা এইরূপ: গুরু অর্থাৎ মুখ্য,নাথ কথার অর্থ কর্তা অর্থাৎ মুখ্য কর্তা যিনি পরমপিতা পরমেশ্বর। সুতরাং গুরুনাথ কথার অর্থ পরমপিতা পরমেশ্বর। পার্থিব গুরুদেব নয়। এতদিন ধরে যারা এই গান গুরুদেবের সামনে করেছে মানে গুরুদেব কে অজ্ঞানতা বশত পরমপিতা পরমেশ্বর হিসাবে স্থান দেওয়ায় জঘন্যতম পাপ করেছে। যার ভেতরে আত্মাকর্ষণের গুণ থাকবে, তার কি কি গুণের অধিকারী হতে হয়, একটু দেখে নিতে বলছি সবাইকে। গুরুদেবের লিখিত "সত্যধর্ম্মের পঞ্চম পরিচ্ছেদ" পড়ে দেখতে বলছি। যে ঐ গুণের অধিকারী হয়, সে "শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্ন" গুণের অধিকারী হয়। সে কি এত বড় ভুল করবে? এর অর্থ জানে না? সে কি করে প্রচার করে গেছে গুরু পূজায় এই গানটি? ভন্ডামীর একটা সীমা আছে। গুণ দিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া যায় সে কি অপরাধটা করে গেছে।
0 মন্তব্যসমূহ