সাকারবাদ কি ?


 সত্যধর্ম্মে সাকার উপাসনা নাই, যোগসাধন নাই, জাতিভেদ নাই এবং নির্ব্বাণ (ঈশ্বরে লীন হওয়া) নাই।


১) সাকার:- যা দেখা যায়, ধরা যায়, ছোঁয়া যায় মূল কথা ইন্দ্রীয় গোচর হয় তা সাকার। যেমন কল্পনা করে দেব বা দেবীর ছবি অথবা মূর্ত্তি বসিয়ে তাকে পরমপিতা জ্ঞানে পূজা করা সাকার বাদ। "সোহহং" কথার অর্থ আমি পরম পিতা সুতরাং আমি অর্থাৎ সাকার স্থূল শরীর সুতরাং এও সাকার বাদ। পর্ব্বত থেকে এক বিন্দু নুড়ি পাথর কখনও বলতে পারে না আমি ঐ পর্ব্বত। সমুদ্র থেকে এক বিন্দু জল কনা বলতে পারে না আমি সমুদ্র তেমনই পরমপিতা থেকে আমরা সৃষ্টি হয়েছি সুতরাং আমরা সৃষ্টি কর্ত্তা হতে পারি না। কোনও সাকার বস্তুকে উপাসনা করা যায় না কেননা গুণ নিরাকার। সাকার বস্তুর মধ্যে বহু গুণের সংমিশ্রণ রয়েছে। গুণ অসীম আর বস্তুর সীমা আছে। সৃষ্ট মণ্ডলের কেউ পরম পিতা নয় কেননা গুণ হীন অর্থাৎ পাপ নিয়ে মাতৃ গর্ভে প্রবেশ করতে হয় উন্নত আত্মাই হোক বা অবনত আত্মাই। সাধনার মাধ্যমে পরমপিতা থেকে গুণ অর্জন করতে হয় পাপ দূর করে। অতএব গুণ যতই অর্জন করুকনা কেন অনন্তের কনিকা স্বরূপ মাত্র।


২) যোগাযোগ সাধন :- যোগসাধন বা আসন সাধন সাকার বিষয় শরীরের কাজ, এতে শরীর বলিষ্ঠ হয়। শুধু শরীরের পূজা অর্থাৎ অর্চ্চনা আছে। এখানে গুণের কোনো কাজ হয় না। গুণের কাজ উপাসনা অর্থাৎ গুণের কীর্ত্তন যেমন বারংবার উচ্চারণ করা ও ঐ গুণের প্রার্থনা করা কেননা ঐ গুণ আমার কাছে নেই। সুতরাং গুণের অস্তিত্ব নিরাকার। অতএব যোগসাধন বা আসন সাধন সাকার বাদ।


৩) জাতিভেদ:- পরমপিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন আমরা তাই বিভেদের বসে ভাগ করি। এই সৃষ্টি মণ্ডলে যা দেখতে পাই সবই পরমপিতার অংশ যেমন পশু, পাখি, কিট, পতঙ্গ, বৃক্ষ, লতা, মানুষ ইত্যাদি সবের মধ্যে ভাগ আছে তেমনই মানুষের মধ্যে ভাগ হয়েছে জলবায়ু ও পরিবেশ জন্য। আমরা সকলেই ঐ এক এবং অদ্বিতীয় পরম পিতার অংশ কিন্তু অষ্টপাশ ষড়রিপু জন্য বিভেদ সৃষ্টি করে পৃথক্ পৃথক্ অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়েছি। কিন্তু পরম পিতা সকলকে সমান ভালোবাসেন তাকে কেউ ডাকুক বা নাই ডাকুক তিনি সকলকে প্রতি মুহূর্তে পালন করছেন সুতরাং তিনি গুণময়, গুণ নিরাকার যা আমাদের ভেতরে অভাব। অতএব আমাদের ভেদাভেদ আছে সুতরাং জাতিভেদ সাকারবাদ।


৪) নির্ব্বাণ :- ঈশ্বরে লীন হওয়া সম্ভব নয় কেননা তিনি অনন্ত অনন্ত অনন্ত গুণময় পরমপিতা। তাঁর গুণের অন্ত নাই, কেননা আমাদের শুধু দোষ আছে গুণের বড়ই অভাব সুতরাং সাধক গুণ সাধনার দ্বারা একটি গুণে একত্ব লাভ বা নিত্য পরমপিতার একত্ব লাভ করলেও ঐ এক অনন্তের কনিকা স্বরূপ। সুতরাং এই ভাবনা যেমন নির্ব্বাণ সাকার ভাব। কেননা এই ভাবনা সীমার মধ্যে, কিন্তু তিনি ত অসীম কেননা গুণ যে অসীম। নির্ব্বাণ অর্থাৎ ঈশ্বরে লীন যেমন মিশে যাওয়া সেটা সম্ভব না, এই যে মিশে যাওয়া এটাও সাকারবাদের পরিচয়। যেমন "সোহহং" আমি পরম পিতা এই ভাবের অন্তর্গত, এটা সাকার ভাব।


এই চারটি অবস্থা পৃথিবীর সকল ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য সাকার বাদ তাই সত্যধর্ম্ম আলাদা পরমপিতা একমাত্র অভিপ্রেত ধর্ম্ম। তাই সত্যধর্ম্মকে পারলৌকিক ধর্ম্ম বলা হয়। পরলোক সূক্ষ্ম গুণও সূক্ষ্ম। সত্যধর্ম্ম গুণ সাধনের ধর্ম্ম। মুখবন্ধে আছে সমস্ত সাকারবাদপূর্ণ ধর্ম্ম হতে সত্যধর্ম্ম আলাদা।


বিঃ দ্রঃ গুণ নিরাকার একমাত্র অনুভূতি দ্বারা অন্তরে অনুভব করি প্রেম, ভক্তি, শ্রদ্ধা, দয়া, সরলতা পবিত্রতা ইত্যাদি অনন্ত প্রকার অতি সূক্ষ্ম গুণ আর সূক্ষ্ম গুণ দৈর্ঘ্য, পোস্ত, উচ্চতা, ঘনত্ব, রং অনন্ত গুণসম্ভার। এই অনন্ত গুণসম্ভার দ্বারা এই সৃষ্টি মন্ডল। অনন্ত গুণকনা একত্রিত হয়ে বস্তু পদার্থের সৃষ্টি হয় যা দৃশ্যমান। গুণকনার সামান্য পরিবর্তনে বস্তুর পরিবর্তন হয় আমি তুমি ইট কাঠ পাথর ইত্যাদি। গুণ যতক্ষণ একক থাকে ততক্ষণ নিরাকার কিন্তু যখনি বহুগুণ একত্রিত হয় তখন বস্তু পদার্থের সৃষ্টি হয় যা সাকার। দেব দেবীরা সবাই সাকার তাঁরা গুণে উন্নতি হয়েছে পরমপিতার অনন্ত গুণের মধ্যে কয়েকটি গুণ অর্জন করেছেন, গুণ তাঁর নিজস্ব না সকল গুণ পরমপিতার সুতরাং দেব দেবীকে পূজা করে লাভ কি? সে যে গুণে উন্নতি করেছেন সেই গুণের পূজা করা কর্ত্তব্য এখানে পূজাকে উপাসনা বলা হয়েছে। মানব জন্মের মূল উদ্দেশ্য গুণ সাধন। সাধনার মাধ্যমে মানব থেকে দেবত্ত্বে ও দেবত্ত্ব থেকে ঈশ্বরত্বে পরিনত করতে হয়। দেব দেবীর গুণ যখন পরমপিতার, অতএব দেব দেবী সাকার সুতরাং তার একমাত্র অর্চ্চনা অর্থাৎ তিনি গুণী হয়েছেন তাঁর গুণের স্মরণ বা প্রশংসা করে সূক্ষ্ম ভাবে পূজা করাই প্রধান কাজ। সুতরাং প্রমাণ হলো দেব দেবীর পূজা মানেও সাকার বাদ। গুরুদেব লিখেছেন বাহ্য পূজা অধমের অধম, তাই ত গুরুদেব বলেছেন গুরু ভিন্ন কাহারো পূজা করিবে না। আর গুরু পূজাও সূক্ষ্মভাবে করাই প্রধান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ