মোক্ষার্থী কে ?


স্বাভাবিক ভাবে মুক্তি বলতে আমরা বুঝি নিস্তার পাওয়া,দুঃখ থেকে নিবৃত্তি,সুখী হওয়া তবে প্রকৃতপক্ষে মুক্তি শব্দের অর্থ সমস্ত কর্তব্য কর্ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া নয় বরং মোক্ষ প্রাপ্ত সাধকের দায়বদ্ধতা এই জগৎবাসীকে মুক্তির পথ দেখানো। ঈশ্বর গুরুনাথ সেনগুপ্ত ১৮৮৫ সালের ২০ ই অক্টোবর সেই সত্যের পথ আবিষ্কার করেছেন,বর্তমানে রণজিৎ হালদার তিঁনি ২০১১ সালে ব্রহ্মদর্শণ লাভ করে একত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করেছেন এমন মহাত্মা বিনা এই মুক্তির পথ কেউ দেখাননি,দেখানোর সাধ্যও নাই।
এই সৃষ্ট জগতে কি জীব কি জড় সবকিছুরই সৃষ্টি,স্থীতি এবং লয় আছে এবং প্রত্যেকেরই জন্মবীজ আছে সেই বীজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সে আচরণ করে এবং একসময় মৃত্যু বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। একটি বীজের মধ্যে যেমন গাছটির সকল বৈশিষ্ট্য সঞ্চিত থাকে তেমনি আমাদের আত্মায় জন্মসূত্রে, জীনগত ভাবে এবং কর্ম বা অভ্যাস দ্বারা অর্জিত কিছু দোষ গুণ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে।তাই ব্যাক্তিভেদে আমারা সবাই স্বতন্ত্র। গুণের অভ্যাস দ্বারা গুণ অর্জন করে অনন্ত গুণময় কে জানতে পারাই মোক্ষ লাভের মূল উদ্দেশ্য।
সন্তান জন্মানোর পর বা আগে থেকে বাবা মায়ের ইচ্ছে থাকে সন্তান বড়ো হয়ে যেন ডাক্তার হয়, বৈজ্ঞানিক হয়, ইঞ্জিনিয়ার হয়,প্লেন চালক হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মোক্ষার্থী হোক এমন সদিচ্ছা তখনই সম্ভব হবে যখন প্রতিটি ঘরে একত্ব প্রাপ্ত সাধক‌‌‌ থাকবেন।একটি গুণে একত্ব পেলেও তিনি পরমপিতার সাথে সঠিকভাবে যোগযুক্ত নন, সৃষ্টিকর্তার করুণা বলে তাঁর অস্তিত্ব জেনেছেন কেবল।প্রেম গুণের সাধক এবং যিঁনি পূর্ণভাবে অনাসক্ত,কাম-ক্রোধ-লোভ-মদ-মাৎসর্য্য,কুল, শীল, জাতি, ঘৃণা, লজ্জা,ভয় ইত্যাদি পাশ এবং রিপুকুলকে দমন করতে পেরেছেন,ভোগের বিষজ্বালা থেকে পরম সুখের তৃপ্তি আস্বাদন করেছেন সেই গুণশোভীত আসক্তি মুক্ত মহাত্মা মোক্ষার্থী বলে বিবেচিত হন।
সেই অশেষ গুণসম্পন্ন গুরুর প্রতি,গুরু‌ পরমিতাকে অভেদ করে যে মুক্তি বীজ জানাবেন সেই বীজমন্ত্রের প্রতি এবং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রতি যদি বিশ্বাস থাকে তবে তিনি মোক্ষ লাভের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।গুরুতে অচলা ভক্তি না আসলে নিষ্ঠা সহকারে বিশ্বাস আসেনা, তাই সমদর্শন সাধনার মাধ্যমে নামমাত্র গুরুভক্তিকে সম্বল করে আত্মোন্নতির পথচলার শুভারম্ভ হয়। সত্যধর্ম্ম বিনা এই বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি ও প্রত্যক্ষ করা যায় এমন সূত্র আর নাই।এই পথ পরমপিতার একমাত্র অভিপ্রেত, অবিনশ্বর, নিত্য এবং সত্যতায় পরিপূর্ণ।
পার্থিব ভাবে আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা কিছুর মধ্যে আবদ্ধ সেসব উপেক্ষা করাই কিন্তু মোক্ষ লাভ নয়। উপরন্তু সংসারে থেকেই আমাদের উপাসনা সাধনা করতে হয়।প্রতিটা ক্ষেত্রে পরমপিতা গুণী হওয়ার সুব্যবস্থা করে রেখেছেন।দোষ গুণের বিচার পূর্বক উচিৎ অনুচিৎ জ্ঞান দ্বারা মূখ্য কার্য সম্পাদন করাই সচেতনতা।গুরু হলেন মুক্তি পথের পথপ্রদর্শক। নিজের ব্যাক্তি স্বাধীনতা গুরুকে অর্পন করলে একমাত্র তিঁনি নিজগুণে এই দায়ভার গ্রহণ করেন।
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ